বায়ুমণ্ডল ও তার বিভিন্ন স্তর

The atmosphere and its various layers

পৃথিবীর জীব বৈচিত্রে বায়ুমন্ডল বিরাট ভূমিকা পালন করে । প্রানীদের বেঁচে থাকার জন্য ও পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের জন্য বায়ুমণ্ডল খুবই গুরুত্বপূর্ণ । বায়ুমণ্ডল গঠিত বিভিন্ন গ্যসীয় স্তর নিয়ে । আমার আজ এই বিভিন্ন স্তর গুলি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করবো । 


বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তর  


1)  ট্রপোস্ফিয়ার বা ঘনমন্ডল বা ক্ষুদ্ধমন্ডল - 

     ক্রান্তীয় অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে 18 কিমি ও মেরু অঞ্চলে 8 কিমি (গড় উচ্চতা 12 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত) 

বিশেষ বৈশিষ্ট্য : 

(1) বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে ঘন ও ভারী স্তর ।

(2) প্রাকৃতিক ঘটনাবলি যেমন ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাত, কুয়াশা, ইত্যাদি এই স্তরে ঘটে । 

(3) প্রতি কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুর উষ্ণতা 6.4 ডিগ্রী সেলসিয়াস কমে যায় ।

(4) ট্রপোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে বলে ট্রপোপজ এখানে উষ্ণতার কোন পরিবর্তন হয় না ।


2) স্ট্রাটোস্ফিয়ার বা শান্ত মন্ডল - 

12 কিমি থেকে 50 কিমির মধ্যে অবস্থিত ।


বিশেষ বৈশিষ্ট্য : 

(1) ঝড়-বৃষ্টি ইত্যাদি না থাকার ফলে এই স্তরের বায়ু শান্ত । 

(2) বায়ুর চাপ খুব কম এবং বায়ু খুব হালকা । 

(3) স্ট্রাটোস্ফিয়ার এর 20 থেকে 50 কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাস পাওয়া যায় । এই স্তরটিকে হলো ওজোনোস্ফিয়ার । এই স্তর সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে । 

(4) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে মেঘ ও বায়ু প্রবাহ দেখা যায় না । তবে মেরু অঞ্চলে নিম্ন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের বরফের কেলাস নিয়ে গঠিত এক প্রকার মেঘ দেখা যায়  মা 'শুক্তির জননী মেঘ' (Polar Stratosphere Cloud) নামে পরিচিত । এই মেঘ ওজোনস্তরে ছিদ্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে । 

5) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমার নাম স্ট্র্যাটোপজ ।


3) মেসোস্ফিয়ার :

50 কিমি থেকে 80 কিমির মধ্যে অবস্থিত । 


বিশেষ বৈশিষ্ট্য :

(1) উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর তাপমাত্রা কমতে থাকে ।

(2) এটি বায়ুমণ্ডলের শীতলতম অঞ্চল । 

(3) মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে, সেগুলি এই মেসোস্ফিয়ার মধ্যে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ।

(4) মেসোস্ফিয়ার এর  উর্ধ্বসীমা কে বলা হয় মেসোপজ ।

 

4) থার্মোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ার : 

 80 কিমি থেকে 500 কিমির মধ্যে অবস্থিত ।


বিশেষ বৈশিষ্ট্য : 

(1) অসংখ্য ধনাত্মক ও ঋণাত্মক তড়িৎ গ্রস্ত কণা বা  আয়ন থাকায় থার্মোস্ফিয়ারের নিচের অংশকে আয়োনোস্ফিয়ার বলে । আয়নোস্ফিয়ার এর 90 থেকে 160 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল টির নাম 'কেনেলি হেবিসাইড স্তর' । এই স্তরে বেতারতরঙ্গকে প্রতিফলিত করে । 

(2) এই স্তরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয় (উর্ধ্বসীমা তাপমাত্রা প্রায় 1500 ডিগ্রী সেলসিয়াস) 

(3) এই স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায় ।

(4) বায়ুমণ্ডলের অন্যান্য স্থানের তুলনায় থার্মোস্ফিয়ার এর বিস্তৃতি যথেষ্ট বেশি হলেও বায়ুস্তর অত্যন্ত পাতলা বলে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের মাত্র 1/200 ভাগ এখানে পাওয়া যায় । 


5) এক্সোস্ফিয়ার : 

500 কিমি থেকে 750 কিমির বা তার ও বেশি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ।


বিশেষ বৈশিষ্ট্য : 

(1) এই স্তরে বায়ু খুবই হালকা ।

(2) এই স্তরের উপর বায়ুমণ্ডল ক্রমশ পাতলা হয়ে মহাশূন্যে মিশেছে । 


জেনে রাখা ভালো :- 

বায়ুমণ্ডলের উর্ধ্বসীমা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 10 হাজার কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত । এক্সোস্ফিয়ার পরবর্তী স্তর ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের। এই স্তরের পর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সৌরমন্ডলে বিলীন হয়ে যায় । ওজোন স্তরকে 'প্রাকৃতিক সৌরপর্দা'  বলা হয় । বায়ুর গতিবেগ মাপার একক হল নট । ওজোন ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব মাপার একক হল ডবসন ।